লঙ্ঘিত হচ্ছে জাতীয় পতাকা বিধি !

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ । দীর্ঘ দিনের বহু ত্যাগ আর শত সংগ্রামের পটভূমির মধ্যে দিয়ে অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্বের মাধ্যমে লাখ প্রাণের বিনিময়ে  ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল এই দেশটির । রাষ্ট্রের পরিচয় তথা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে পেয়েছিল একটি জাতীয় পতাকা । সেই পতাকার ছায়াতলে সাত কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ  তিয়াল্লিশ বছরে এখন প্রায় পনেরো  কোটি । যেটিকে নিজ দেশের পরিচয় হিসেবে গৌরবের ব্যবহার করে আসছে জনগণ । কিন্তু প্রায় সময়ে দেখা যায় এই জাতীয় পতাকার প্রতি  সম্মান,মর্যাদা প্রদর্শন করতে গিয়ে এর যথাযথ ব্যবহার করা হয়না ! অথচ সকলের উচিত তথা কর্তব্য হল এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সম্মান,মর্যাদা প্রদর্শন করা । এবং এই লক্ষে আইনও প্রণীত আছে । দু:খের বিষয় হল, বাস্তবে সেই সব আইনের প্রয়োগ বা ব্যবহার খুবই কম।

প্রায় সময়ে দেখা যাচ্ছে, কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র জাতীয় পতাকার ব্যবহার । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা,সমাবেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি -বেসরকারি ক্লাব,সমিতি, সংঘ, সংস্থা,সংঘঠন, প্রতিষ্ঠানে  বিভিন্ন কর্মসূচিতে ও নানান আয়োজনে এই জাতীয় পতাকা বিধিমালার লঙ্ঘন ছড়াছড়ি চোখে পরে। এছাড়াও দেখা যায় অধিকাংশ ভবনে, দোকান- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, যানবহনে কোন নিয়ম-নীতি   মানা হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে যেসব পতাকা ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর আকার, বর্গাকার, দৈর্ঘ্য প্রস্থের,কালার  কোনটাই ঠিক নাই। কখন, কোথায়, কিভাবে, কি কারণে, ব্যবহার করা উচিৎ সে সম্পর্কে  তারা বেমালুম । যারা পতাকা বানায় (দর্জি) তারাও মনে হয় জানে না ,আইনে পতাকার আকার ও রঙের ব্যাপারে কি বলা হয়েছে।

মূলত এসব কিছু হচ্ছে অজ্ঞতা ও আইন না জানার এবং না মানার  কারণে। যার কোনটি কাম্য নয় বরং শাস্তিযোগ্য । আর আমি মনে করি এগুলোর জন্য দায়ি হচ্ছে সরকার । কারণ আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সেটা আন্তরিক ভাবে করছে না বা আমলে নিচ্ছেন না । পাশাপাশি আমাদের সকলের উচিৎ জাতীয় পতাকা বিধি জেনে এর যথাযথ ব্যবহার করা এবং মানুষকে সচেতন করা । চলুন এবার জেনে নেই এ সম্পর্কে আইনের বিধি – বিধান ;

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ (১) মতে- 'প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা হচ্ছে সবুজ ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত' থাকবে।পতাকা বিধি মতে — পতাকার রঙ হবে গাঢ় সবুজ (প্রুসিয়ান গাঢ় সবুজ এইচ-২ আর,এস, হাজারে ৫০ ভাগ) এবং সবুজের ভিতরে একটি লাল (প্রুসিয়ান উজ্জ্বল কমলা রং এইচ-২ আর.এস ৬০ হাজারের ভাগ) বৃত্ত থাকবে। ১০:৬ অনুপাতে আয়তাকার হবে। পতাকার লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে পতাকার মোট দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ। বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর অবস্থান হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের ৯/১০ অংশ থাকে টানা লম্বের এবং প্রস্থের মাঝখান দিয়ে টানা অনুভূমিক রেখার ছেদবিন্দুতে।

জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)- এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান অনুযায়ী:
(১) সর্বদা পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করিতে হইবে।
(২) পতাকা দ্বারা মোটরযান, রেলগাড়ি অথবা নৌযানের খোল, সম্মুখভাগ অথবা পশ্চাদ্ভাগ কোন অবস্থাতেই আচ্ছাদিত করা যাইবে না।
(৩) যেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের পতাকা অথবা রঙিন পতাকার সহিত বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য স্থান সংরক্ষিত থাকিবে।
(৪) যেক্ষেত্রে কেবলমাত্র দুইটি পতাকা অথবা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ভবনের ডানদিকে উত্তোলন করা হইবে।
(৫) যেক্ষেত্রে পতাকার সংখ্যা দুইয়ের অধিক হয়, সেক্ষেত্রে অযুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যখানে এবং যুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যভাগের ডানদিকে উত্তোলন করা হইবে।
(৬) যেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অন্য পতাকার সহিত আড়াআড়িভাবে কোন দণ্ডে দেয়ালের বিপরীতে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা অন্য পতাকার ডানদিকে আড়াআড়িভাবে থাকিবে (আড়াআড়িভাবে যুক্ত পতাকা দুইটির দিকে মুখ করিয়া দণ্ডায়মান ব্যক্তির বামদিকে) এবং পতাকা দণ্ডটি অন্য পতাকা দণ্ডের সম্মুখভাগে স্থাপিত হইবে।
(৭) ‘বাংলাদেশের পতাকা’র উপরে অন্য কোন পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাইবে না।
(৮) ‘বাংলাদেশের পতাকা’শোভাযাত্রার মধ্যভাগে বহন করা হইবে অথবা সৈন্য দলের অগ্রগমন পথে শোভাযাত্রার ডানদিকে বহন করা হইবে।
(৯) মর্যাদার প্রতীক সম্বলিত ঢালে অযুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যভাগে এবং সর্বোচ্চ কেন্দ্রে থাকিবে এবং যুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ঢালের ডানদিকে শীর্ষে (ঢালের দিকে মুখ করিয়া দণ্ডায়মান ব্যক্তির বামদিকে) বাংলাদেশের পতাকা স্থাপন করা হইবে।
(১০) যেক্ষেত্রে অন্য কোন দেশের সহিত' বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’প্রথমে উত্তোলন করিতে হইবে এবং নামাইবার সময় সর্বশেষে নামাইতে হইবে।
(১১) যেক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক দেশের পতাকা প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি পতাকা পৃথক পৃথক দণ্ডে উত্তোলন করা হইবে এবং পতাকাসমূহ প্রায় সমান আয়তনের হইবে।
(১২) যেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হইবে এবং অতঃপর নামাইয়া অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হইবে। ঐ দিবসে নামাইবার সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হইবে, অতঃপর নামাইতে হইবে।
(১৩) যেক্ষেত্রে দণ্ডের উপর ব্যতীত অন্যভাবে কোন দেয়ালের উপর ‘পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে উহা দেয়ালের সমতলে প্রদর্শিত হইবে। কোন পাবলিক অডিটোরিয়াম বা সভায় ‘পতাকা’ প্রদর্শন  করিতে হইলে উহা বক্তার পশ্চাতে উপরের দিকে প্রদর্শিত হইবে। যেক্ষেত্রে রাস্তার
মধ্যখানে পতাকা প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে উহা খাড়াভাবে প্রদর্শিত হইবে।
(১৪) কবরস্থানে ‘জাতীয় পতাকা’ নিচু করা যাইবে না বা ভূমি স্পর্শ করান যাইবে না।
(১৫) ‘পতাকা’ কোন ব্যক্তি বা জড় বস্ত্তর দিকে নিম্নমুখী করা যাইবে না।
(১৬) ‘পতাকা’ কখনই উহার নিচের কোন বস্ত্ত যেমন: মেঝে, পানি বা পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করিবে না।
(১৭) ‘পতাকা’ কখনই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাইবে না, সর্বদাই । ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকিবে।
(১৮) ‘বাংলাদেশের পতাকা’ কোন কিছুর আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে না, তবে শর্ত থাকে যে, কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি যাঁহাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদা বা পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতাসহ সমাধিস্থ করা হয়, তাঁহার শবযানে পতাকা আচ্ছাদনের অনুমোদন প্রদান করা যাইতে পারে।
(১৯) ‘পতাকা’ এমনভাবে উত্তোলন, প্রদর্শন, ব্যবহার বা সংরক্ষণ করা যাইবে না, যাহাতে উহা সহজেই ছিঁড়িয়া যাইতে পারে বা যে কোনভাবে ময়লা বা নষ্ট হইতে পারে।
(২০) কোন কিছু গ্রহণ, ধারণ, বহন বা বিলি করিবার নিমিত্ত ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাইবে না।
(২১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরোপিত কোন শর্তাবলী (যদি থাকে)এবং লিখিত অনুমোদন ব্যতীত, কোন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্বোধন, পেশা বা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের ‘পতাকা’ কোন ট্রেড মার্ক, ডিজাইন, শিরোনাম অথবা কোন প্যাটেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে না।
(২২) যেক্ষেত্রে ‘পতাকা’র অবস্থা এমন হয় যে, উহা আর ব্যবহার করা না যায়, সেক্ষেত্রে উহা মর্যাদা পূর্ণভাবে, বিশেষ করিয়া সমাধিস্থ করিয়া, নিষ্পত্তি করিতে হইবে।
(২৩) ‘পতাকা’ দ্রুততার সহিত উত্তোলন করিতে হইবে এবং সসম্মানে নামাইতে হইবে।
(২৪) ‘পতাকা’ উত্তোলন ও নামাইবার সময়এবং প্যারেড পরিক্রমণ ও পরিদর্শনের সময় উপস্থিত সকলে ‘পতাকা’র দিকে মুখ করিয়া সোজা হইয়া দাঁড়াইবেন।
(২৫) যেক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে একই সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হইবে। যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং ‘জাতীয় পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, তখন উপস্থিত সকলে ‘পতাকা’র দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবেন। ইউনিফর্ম-ধারীরা স্যালুট-রত থাকিবেন। ‘পতাকা’ প্রদর্শন না করা হইলে, উপস্থিত সকলে বাদ্য যন্ত্রের দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবেন, ইউনিফর্ম-ধারীরা জাতীয় সঙ্গীতের শুরুহইতে শেষ পর্যন্ত স্যালুট-রত থাকিবেন।
(২৬) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরঅনুমতি ব্যতীত, ‘জাতীয় পতাকা’ অর্ধনমিত করা যাইবে না, তবে শর্ত থাকে যে, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান(যে দেশের নিকট তিনি আস্থাভাজন) ইচ্ছা করিলে ঐ সকল দিবসে ‘পতাকা’ অর্ধনমিত রাখিতে পারিবেন, যে সকল
দিবসে উক্ত দেশে, সরকারীভাবে ‘পতাকা’অর্ধনমিত রাখা হয়।

পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নির্দেশনাবলি রয়েছে আইনে,
(১) মোটর গাড়ী, নৌযান এবং উড়োজাহাজ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ‘পতাকা’ উত্তোলিত থাকিবে, তবে শর্ত থাকে যে, বিশেষ কারণে ভবনসমূহে রাত্রে ‘পতাকা’ উত্তোলিত রাখা যাইতে পারে, যেমন- সংসদের রাত্রের অধিবেশন চলাকালীন
অথবা রাষ্ট্রপতি, অথবা মন্ত্রীগণের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়।
(২) যেক্ষেত্রে মোটর গাড়ীতে ‘পতাকা’ প্রদর্শন করা হয়, সেইক্ষেত্রে গাড়ীর চেসিস অথবা রেডিয়েটর ক্যাপের ক্ল্যাম্পের সহিত পতাকা দন্ড
দৃঢ়ভাবে আটকাইতে হইবে।
(৩) ‘পতাকা’র উপর কোন কিছু লিপিবদ্ধ করা যাইবে না বা ছাপান যাইবে না। কোন অনুষ্ঠান বা অন্য কোন উপলক্ষে ‘পতাকা’র
উপর কোন কিছু লিপিবদ্ধ করা যাইবে না।
(৪) উপরে বর্ণিত এবং সময়ে সময়ে পরিবর্তিত উক্ত বিধিসমূহের অনুসরণ ব্যতীত, অন্য কোনভাবে ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাইবে না।
(৫) সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী কর্তৃক ‘পতাকা’র ব্যবহার এতদুদ্দেশ্যে প্রণীত বিশেষ বিধিমালা দ্বারা পরিচালিত হইবে।

বিশ্বকাপের সময় অনেক ক্রীড়া প্রেমী তাঁদের পছন্দের দেশের পতাকা উত্তোলন করে থাকেন। তাঁদের জন্য নির্দেশনা হচ্ছে,
(১) বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনসমূহের চ্যান্সারী ভবন এবং কনস্যুলার অফিসসমূহে বিদেশের ‘জাতীয় পতাকা’উত্তোলন করা যাইতে পারে। অধিকন্তু,কূটনৈতিক মিশনসমূহের প্রধানগণ তাঁহাদের সরকারী ভবন এবং মোটর গাড়ীতে তাঁহাদের' জাতীয় পতাকা’ উত্তোলন করিতে পারিবেন।
(২) বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ভ্রমণকালীন সময়ে নিম্নবর্ণিত শ্রেণীর সম্মানিত বিদেশী ব্যক্তিগণ তাঁহাদের নিজস্ব পতাকা অথবা নিজস্ব পতাকা না থাকিলে তাঁহাদের দেশের জাতীয় পতাকা তাঁহাদের অফিসিয়াল বাসভবনে এবং মোটর গাড়ীতে উত্তোলন করিতে পারিবেন:
(ক) রাষ্ট্রপ্রধান;
(খ) ভ্রমণরত প্রধানমন্ত্রী;
(গ) বিদেশী সরকারের মন্ত্রীবর্গ।
(৩) বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনসমূহ কোন উপলক্ষে, যেমন-জাতীয় দিবসসমূহে কূটনৈতিক মিশন প্রধানের বাসভবন বা চ্যান্সারী ব্যতীত, যে স্থানে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হইবে, সেইস্থানে তাঁহাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করিতে পারিবে, তবে শর্ত থাকে যে, সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশের 'পতাকা’ও সম্মানজনক স্থানে পাশাপাশি উত্তোলন করিতে হইবে।
*** উপরিউক্ত বিধিতে উল্লিখিত সুবিধাদি কেবলমাত্র সেই সকল দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে যাহারা পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকেও অনুরূপ সুবিধা প্রদান করিবে।
(৪) উপরিউক্ত বিধিসমূহের বর্ণনা ব্যতীত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন ব্যতীত, বিদেশী রাষ্ট্রের পতাকা কোন গাড়ীতে বা ভবনে উত্তোলন করা যাইবে না।

এছাড়াও, পৃথক পৃথক স্থানে পতাকা উত্তোলনের জন্য কিছু নির্ধারিত নীতিমালা হয়েছে। যেমন,
√ ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো—১০ ফুট* ৬ ফুট, ৫ ফুট *৩ ফুট, ২.৫ ফুট /১.৫ ফুট।
√ মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো—১৫ ইঞ্চি* ৯ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি *৬ ইঞ্চি।
√ আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ হল—১০ ইঞ্চি *৬ ইঞ্চি।
এখানে উল্লেখ্য, সরকার ভবনের আয়তন অনুযায়ী এবং প্রয়োজনে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ঠিক রেখে বড় আয়তনের পতাকা প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করতে পারবে।
কিছু বিশেষ দিনে সারা দেশের সরকারী- বেসরকারী সবধরনের অফিসে জাতীয় পতাকা উড়ানোর নির্দেশনা আছে আইনে।
দিবসগুলো হলো, 
√ মহানবীর জন্মদিন(ঈদ-এ- মিলাদুন্নবী),
√ স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ),
√ বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর)  এবং √ সরকার কর্তৃক ঘোষিতঅন্য যেকোন দিন। 

এছাড়াও -√ শহীদ দিবস , (২১শে ফেব্রুয়ারী) এবং √ সরকার কর্তৃক ঘোষিত অন্য যেকোন দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার জন্যে আইনে বলা আছে। 

***আইন অমান্যকারীদের শাস্তি:
জাতীয় পতাকার জন্যে এই আইন ১৯৭২ সালে প্রণীত হলেও ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত এই আইন অমান্যকারীদের জন্যে কোন শাস্তির বিধান ছিলোনা। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২০ জুলাই জাতীয় সংসদে একটি নতুন বিল পাশ হয় যার দ্বারা এই আইনে শাস্তির বিধান সংযোজন করা হয়। 
পাশ হওয়া  বিল অনুযায়ী, অমান্যকারীদের জন্যে ১ বছরের কারাদন্ড বা ৫০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

লেখক: এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী(রায়হান), আইন বিভাগের ছাত্র, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্রগ্রাম।

Mega World News Facebook Twitter Myspace Friendfeed Technorati del.icio.us Digg Google Yahoo Buzz StumbleUpon Eli Pets

Comments are closed.

Contact Us

Call Us0088-01755991488, 01675623096

Chambers:
*House : 21/A, Road : 16, Sector : 4 , Uttara, Dhaka-1230, Bangladesh.

*Hasna Hena Cottage, Room : 3/B (2nd Flr.), Agorbati Goli, 37/1 Court House Street, Kotwali, Dhaka, Bangladesh.

E-mail: admin@lawthinkers.com
Web: Law Thinkers

Archives